Ticker

6/recent/ticker-posts

Ad Code

Responsive Advertisement

কোটা সংস্কার আন্দোলনে দুর্ভোগ সীমাহীন

 লিশি হামলার’ অভিযোগে শুক্রবার ২ নম্বর গেটে বিশাল জমায়েত হয় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের। এতে চারপাশের সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, চরম দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ মারজান আক্তার

সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে চলমান আছে আন্দোলন। গত এক সপ্তাহ ধরে টানা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে চট্টগ্রামে। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে আন্দোলনকারীদের লাঠিপেটা করেছে পুলিশ। নগরের ষোলশহর দুই নম্বর গেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এতে নারীসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। শুক্রবার এ ঘটনার প্রতিবাদে হয়েছে লংমার্চ। গতকাল শনিবারও কোটার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করেছে শিক্ষার্থীরা।  
পুলিশের হামলার প্রতিবাদে লংমার্চ: কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের হামলার প্রতিবাদে শুক্রবার চট্টগ্রামে নগরীজুড়ে লংমার্চ করছেন শিক্ষার্থীরা। বিকেল ৫টায় শাটলে করে নগরীর ষোলশহর স্টেশনে জমায়েত হন কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। সেখান থেকে ২ নম্বর গেট, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, চট্টগ্রাম মেডিকেল, চকবাজার, জামালখান হয়ে লংমার্চ করেছেন। এ সময় চকবাজার এলাকায় পুলিশকে দুয়োধ্বনি দেন শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার শিক্ষার্থীরা চট্টগ্রামে বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে জমায়েত হতে শুরু করেন। এ সময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা জমায়েত হন। বিকেল ৫টায় প্রায় পাঁচ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী নিয়ে নগরজুড়ে লংমার্চ শুরু করেন। হাজারো শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে জনসমুদ্রে পরিণত হয় লংমার্চ। 
এ সময় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে দুয়োধ্বনি দিতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। পুলিশের সামনে দাঁড়িয়ে হাজারো শিক্ষার্থী দুয়োধ্বনি দিতে থাকেন। পুলিশ ‘ভুয়া’; ‘পুলিশ দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা চলবে না’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। 
আন্দোলনরত মহসিন কলেজের শিক্ষার্থী আবদুর রহিম বলেন, ‘গতকাল পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর যে হামলা করেছে তা সঠিক ছিল না। আমাদের দাবি যে যৌক্তিক তার প্রমাণ আজকের গণজোয়ার।
আন্দোলনকারীদের সঙ্গে হাতাহাতি : বৃহস্পতিবার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের হাতাহাতি হয়েছে, ঘটেছে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা। এতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এদিকে শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটার প্রতিবাদে ২ নম্বর গেটের গোলচত্বর ঘিরে সড়ক অবরোধ করে অবস্থান নেন কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। ফলে চট্টগ্রাম নগরের প্রধান সড়ক সিডিএ অ্যাভিনিউতে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। একই সঙ্গে বায়েজিদ বোস্তামী সড়কেও যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। প্রধান সড়কের যানজট ছড়িয়ে পড়ে নগরের শাখা সড়কগুলোতেও। ফলে অচল হয়ে পড়ে চট্টগ্রাম নগরের একাংশ। দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ। সাপ্তাহিক ছুটি সামনে রেখে বৃহস্পতিবার অফিস শেষে বাড়ি ফেরা লোকজনও পথে আটকা পড়েছেন। সন্ধ্যা পৌনে ৮টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সড়কে অবস্থান রয়েছে শিক্ষার্থীদের। এদিকে শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটার খবর ছড়িয়ে পড়লে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১নং গেটে হাটহাজারী-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেছেন প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী।
পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটা থেকে নগরের রেলওয়ে স্টেশনে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। বিকেল ৪টায় মিছিল নিয়ে বের হন। পেছনে পেছনে হাঁটতে থাকে পুলিশ। টাইগারপাসের দিকে যাওয়ার পথে পলোগ্রাউন্ডের বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছালে পূর্ব থেকে অবস্থান নেওয়া পুলিশ সদস্যরা তাদের সামনে যেতে বাধা দেন। এতে দু’দিকে পুলিশি ঘেরাওয়ের মধ্যে পড়ে যান শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। ব্যানার নিয়ে টানাহেঁচড়া হয়। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে টাইগারপাসের দিকে চলে যান। সেখানে অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। শিক্ষার্থীরা পুনরায় জড়ো হয়ে সেখান থেকে মিছিল নিয়ে লালখান বাজার, ওয়াসা, দামপাড়া, জিইসি হয়ে ২ নম্বর গেটের দিকে যায়। সেখানে পূর্ব থেকে অবস্থান ছিল পুলিশের। 
শিক্ষার্থীরা ২ নম্বর গেট চত্বরে অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করলে শুরুতে পুলিশ সামনে থেকে ব্যারিকেড দেয়। পুলিশ কর্মকর্তারা এসে তাদের বুঝিয়ে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। লাঠিচার্জ করে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার চেষ্টা করে। শিক্ষার্থীদের অনড় অবস্থানের কারণে পিছু হটে পুলিশ সদস্যরা। পরে সড়কের মাঝখানে ও চারপাশে অবস্থান নেয় কয়েকশ পুলিশ। শিক্ষার্থীরা দুই নম্বর গেট চত্বরে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় তারা ‘পুলিশ দিয়ে আন্দোলন, বন্ধ করা চলবে না’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দিবো না’, ‘আমার বোনের ওপর আঘাত কেন? জবাব চাই চাই’– এসব স্লোগান দেন। 
পুলিশের লাঠিচার্জে আহত শিক্ষার্থী রেজাউর রহমান বলেন, ‘সেই বায়ান্ন সাল থেকে পুলিশ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে হামলা করে আসছে। আমার বুকে এই রক্তের দাগ রাষ্ট্রের জন্য লজ্জার।’
শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটার বিষয়টি অস্বীকার করে নগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আমরা লাঠিপেটা করিনি। আমরা শুধু ব্যারিকেড দিয়েছিলাম। আমরা তাদের বুঝিয়ে তাদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তারা ব্যারিকেড ভেঙে মিছিল নিয়ে গিয়ে সড়কে অবস্থান নিয়েছে।’
দুর্ভোগের একশেষ: শিক্ষার্থীরা ২ নম্বর গেটে অবস্থান নিলে নগরের প্রধান সড়ক সিডিএ অ্যাভিনিউতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে লালখান বাজার থেকে ২ নম্বর গেট ও মুরাদপুর থেকে ২ নম্বর গেট পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটারজুড়ে যানজট তৈরি হয়। এ ছাড়া প্রবর্তক মোড় থেকে ২ নম্বর গেট ও পলিটেকনিক মোড় থেকে ২ নম্বর গেট পর্যন্ত বায়েজিদ বোস্তামী সড়কেও যানজট তৈরি হয়। যানজট ছড়িয়ে পড়ে নগরের জাকির হোসেন সড়কসহ বিভিন্ন শাখা সড়কগুলোতেও। সাপ্তাহিক ছুটিকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার অফিস শেষে বাড়ি যেতে বের হওয়া লোকজন পথে আটকা পড়েছেন। অনেকে হেঁটে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন।
২ নাম্বার গেই খাদ্যপণ্যের গাড়ি নিয়ে আটকা পড়েছেন চালক আবুল বশর। তিনি বলেন, ‘২ ঘণ্টা ধরে আটকে আছি। সাতকানিয়া থেকে এসেছি, টেক্সাটাইল যাওয়ার কথা। কিন্তু কখন 

পৌঁছাবো তা বুঝতে পারছি না।’ সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারি থেকে পরিবার নিয়ে আসছিলেন মো. অনিক। দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে দুই নম্বর গেইটের ভিড় ঠেলে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। অনিক বলেন, ‘যানজটের কারণে পরিবার নিয়ে হেঁটে যেতে হচ্ছে। কষ্ট হচ্ছে। তবে ওরাওতো দেশের ভালোর জন্য কিছু করছে।’
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের পরিদর্শক (ট্রাফিক-উত্তর) আবদুস সবুর বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের অবস্থানের কারণে সড়কের একপাশ বন্ধ রয়েছে। গাড়ি আটকে পড়ায় অন্যপাশও খালি। বহদ্দারহাট থেকে যারা ফ্লাইওভার ব্যবহার করছেন তারা লালখানাবাজারে নামতে পারছেন। বায়েজিদ বোস্তামী সড়ক থেকেও যারা ফ্লাইওভার ব্যবহার করছেন তাদের সমস্যা হচ্ছে না। তবে নিচে যানজট দীর্ঘ হচ্ছে। বিভিন্ন সড়কেও ছড়িয়ে পড়ছে।’

Post a Comment

0 Comments